গত কয়েক মাস ধরে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া ও তার আশেপাশের এলাকার আলু চাষীরা (Potato farming) চরম দুর্দশায় ভুগছেন। ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) কর্তৃক জল ছাড়া এবং অকাল বর্ষণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার চাষযোগ্য জমি জলমগ্ন হয়ে যায়। এর ফলে আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাষীরা সারা বছর পরিশ্রম করে ফসল তোলার মুখে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। জল জমে যাওয়ার কারণে মাঠে নেমে আলু তোলার চেষ্টা করতে হয় তাদের। এই পরিস্থিতিতে চাষীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
আলু চাষীদের আর্থিক সহায়তা
এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাষীদের জন্য একটি বড় সুখবর নিয়ে এসেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, আলুর সহায়ক মূল্য (MSP) বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। এই ঘোষণা শুনে আলু চাষের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন খুশি হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য ৩২১ কোটি টাকার একটি বিমা ফান্ড তৈরি করেছেন। এই ফান্ডের মাধ্যমে চাষীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষীদের কাছ থেকে কিনে নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই ডিভিসি জল ছেড়ে দিয়েছে।” এই সিদ্ধান্তের ফলে হাওড়া ও সংলগ্ন এলাকার চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
Potato MSP In West Bengal
বিষয় | পুরানো মূল্য | নতুন মূল্য |
---|---|---|
আলুর সহায়ক মূল্য (MSP) | ৭০০ টাকা | ৯০০ টাকা |
এই টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে, আলুর সহায়ক মূল্য ২০০ টাকা বেড়েছে। এই বৃদ্ধি চাষীদের জন্য একটি বড় সুবিধা বয়ে আনবে। চাষীরা এখন তাদের ফসল বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাদের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।
আরও পড়ুন– লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের নিয়মাবলী।
Potato farming চাষীদের প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শুনে চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। হাওড়া জেলার এক আলু চাষী বলেন, “আমরা সারা বছর পরিশ্রম করি। কিন্তু ডিভিসির জল ছাড়া ও অকাল বর্ষণের কারণে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি।” অন্য এক চাষী বলেন, “সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে শুনে খুব খুশি হয়েছি। এখন আমরা আমাদের ফসল ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি ঋণ, বীজ বিতরণ, এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ। এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে চাষীদের সাহায্য করা হবে। এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্যাকেজেরও ঘোষণা করা হয়েছে।
এলাকা | ক্ষতির পরিমাণ |
---|---|
হাওড়া | ৬০% |
হুগলি | ৫০% |
পূর্ব বর্ধমান | ৪০% |
এই টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে, হাওড়া জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে এই সব এলাকার চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
আরও পড়ুন– প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৩৫১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা।
চাষীদের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা চাষীদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, “চাষীরা যেন ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেন।” এর মধ্যে রয়েছে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, এবং ফসল বীমা করা। এতে করে চাষীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবেন।
পশ্চিমবঙ্গের আলু চাষীরা (Potato farming) গত কয়েক মাস ধরে চরম দুর্দশায় ভুগছেন। ডিভিসির জল ছাড়া ও অকাল বর্ষণের ফলে তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা চাষীদের জন্য একটি বড় সুখবর বয়ে এনেছে। সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি এবং ক্ষতিগ্রস্ত আলু কিনে নেওয়ার ঘোষণা চাষীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আশা করা যায়, রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ চাষীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করবে।