প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার ৩৫১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করেছে। এই অর্থ বাংলা শস্য বিমা (Bangla Shasya Bima Payment 2025) প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টির কারণে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ধান চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণের টাকা কৃষকদের জন্য একটি বড় স্বস্তি বয়ে এনেছে।
গত বছর অক্টোবর মাসে উড়িষ্যা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৯ লক্ষ কৃষক এই দুর্যোগে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপরই রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া শুরু করে।
এছাড়াও, গত কয়েক মাসে অতিবৃষ্টি এবং ড্যাম থেকে জল ছাড়ার কারণে হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলায় ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই সব কারণেই কৃষকদের সাহায্য করতে ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
Bangla Shasya Bima Payment 2025
পশ্চিমবঙ্গ সরকার উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করে। এই পদ্ধতিতে খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এর ফলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত দেওয়া যায়। রাজ্য সরকারের দাবি, এই কৌশল ব্যবহার করায় তারা সময়মতো ক্ষতিপূরণ বিতরণ করতে পেরেছে।
বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আর্থিক সাহায্য পাবেন। এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৭১ লক্ষ ৯৮ হাজার কৃষক নথিভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ লক্ষ ১৩ হাজার আলু চাষী রয়েছেন। এবার আলু ও আখ চাষীদের প্রিমিয়াম দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এই সিদ্ধান্ত ২০২৪-২৫ রবি ও বোরো মরশুম থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন– লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের নিয়মাবলী।
ফসলের ক্ষতিপূরনের টাকা ছাড়লো মমতা
রাজ্য সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলা শস্য বিমার জন্য ১০২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। পরবর্তী অর্থবছরে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে ১১২৫ কোটি টাকা করা হয়। ২০২৫-২০২৬ সালের বাজেটে এই বরাদ্দ আরও বেড়ে ১৩১৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা হবে।
বাংলা শস্য বিমা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১২ লক্ষ কৃষক ৩৫৬২ কোটি টাকা পেয়েছেন। এই টাকা পেয়ে কৃষকরা খুশি। তারা এখন নিশ্চিন্তে বলতে পারেন যে, তাদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দ্রুত আসবে এবং তারা আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।
ক্ষতিপূরণের স্ট্যাটাস চেক করার উপায়
ক্ষতিপূরণের স্ট্যাটাস চেক করার জন্য কৃষকরা অনলাইনে যেতে পারেন। নিচের লিংকে ক্লিক করে তারা তাদের ক্ষতিপূরণের স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন:
ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে কৃষকরা খুব খুশি। তারা বলছেন, এই টাকা তাদের জন্য একটি বড় সাহায্য। বিশেষ করে যারা গত বছরের ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাদের জন্য এই টাকা খুবই প্রয়োজন ছিল।
একজন কৃষক বলেন, “আমরা অনেক কষ্টে আছি। ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এই টাকা পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।”
রাজ্য সরকার কৃষকদের সাহায্য করতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। নবান্নে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ প্রান্তের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে রবি ও বোরো মরশুমের জন্য বাংলা শস্য প্রকল্পে কৃষকদের নাম নথিভুক্ত করার কাজ কতটা এগিয়েছে তা দেখা হয়।
সরকারের লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব সব কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দ্রুত ক্ষতিপূরণ পাবেন।
আরও পড়ুন– প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা মাত্র ৫৫ টাকায় মাসে ৩০০০ টাকার পেনশন।
সারসংক্ষেপ
- ৩৫১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ।
- ৯ লক্ষ কৃষক এই টাকা পাবেন।
- উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ।
- বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ।
- ২০২৫-২০২৬ সালে বরাদ্দ বেড়ে ১৩১৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা হবে।
এই সব তথ্য জানার পর কৃষকরা নিশ্চিন্তে বলতে পারেন যে, তাদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দ্রুত আসবে এবং তারা আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।