WBBPE Semester System: রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আনা হচ্ছে আমূল বদল! ইতিমধ্যেই কলেজ শিক্ষায় সেমিস্টার কথার সাথেই পরিচিতি হয়েছে রাজ্যের পড়ুয়াদের। কিন্তু রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এবারে আনা হচ্ছে সেমিস্টার সিস্টেমে পরীক্ষা। এছাড়া সিলেবাস থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করার ক্ষেত্রেও আনা হচ্ছে বদল। বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক আজকের এই প্রতিবেদনে।
WBBPE Semester – প্রাথমিকেও সেমিস্টার সিস্টেমে পরীক্ষা
রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন: জাতীয় শিক্ষা নীতির ভিত্তিতে সেমেস্টার পদ্ধতি চালু
রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP) ওপর ভিত্তি করে এনসিইআরটি (NCERT) একটি নতুন কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বাস্তবায়ন করার ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতার জন্য ছোট থেকেই প্রস্তুত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন পরীক্ষাপদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রম কাঠামো কার্যকর হবে।
‘নো ডিটেনশন’ পলিসি ও প্রাথমিক কাঠামো
২০০৯ সালের রাইট টু এডুকেশন আইন অনুসারে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নো ডিটেনশন’ পলিসি চালু রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতার কারণে একই শ্রেণিতে আটকানো হবে না। তবে, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের WBBPE Semester System তথা সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
- প্রাক-প্রাথমিকে: WBBPE Semester System তথা সেমিস্টার পদ্ধতিতে ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
- প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি:
- শিক্ষাবর্ষে ৮০০ ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে।
- প্রতি সেমিস্টারে ৩৭৬ ঘণ্টা।
- তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি:
- শিক্ষাবর্ষে ১০০০ ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে।
- প্রতি সেমিস্টারে ৪৬০ ঘণ্টা।
নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি
প্রাথমিক পর্ষদের ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন পাঠ্যক্রম কাঠামো অনুযায়ী, একটি শিক্ষাবর্ষকে দুটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে।
- জানুয়ারি থেকে জুন: প্রথম সেমিস্টার।
- জুলাই থেকে ডিসেম্বর: দ্বিতীয় সেমেস্টার।
প্রতি সেমিস্টারে পাঠ্যক্রম আলাদাভাবে সাজানো হবে। শিক্ষার্থীদের বছরে দুইবার পরীক্ষা দিতে হবে।
- প্রথম পরীক্ষা: জুন মাসে।
- দ্বিতীয় পরীক্ষা: ডিসেম্বরে।
পরীক্ষার পদ্ধতিতে পরিবর্তন
- WBBPE Semester System তথা সেমিস্টার পদ্ধতিতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুলে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
- প্রশ্নপত্র তৈরি করবে পর্ষদ।
- তবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকবেন স্কুলের শিক্ষকরা।
- প্রতিটি পরীক্ষায় ৬০ ঘণ্টার লিখিত মূল্যায়ন হবে।
- মার্কশিটে নম্বরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট পয়েন্ট দেওয়া হবে, যা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে স্বীকৃত।
ক্রেডিট স্কোর সিস্টেম
পর্ষদ জানিয়েছে, ক্রেডিট পয়েন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
- প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি:
- সর্বোচ্চ ক্রেডিট পয়েন্ট: ১৩.৫।
- তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি:
- সর্বোচ্চ ক্রেডিট পয়েন্ট: ১৬.৫।
এই ক্রেডিট স্কোর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- সর্বোচ্চ ক্রেডিট পয়েন্ট: ১৬.৫।
সিলেবাসে বড়সড় পরিবর্তন
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে নতুন কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
- ২০২৫ সাল পর্যন্ত পুরোনো সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা হবে।
- ২০২৬ সাল থেকে নতুন পাঠ্যক্রম কার্যকর হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই প্রস্তাবকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমোদন দিয়েছেন। গৌতম পাল জানিয়েছেন, সরকারের সহযোগিতায় এই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
উদ্দেশ্য এবং প্রভাব
নতুন এই পদ্ধতির লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল বলেন, “সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার মান মেলানো এবং শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের জন্য তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ।”
এই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের চাপ কমবে এবং শিক্ষায় ধারাবাহিক উন্নতি ঘটবে।
এই WBBPE Semester System সংক্রান্ত পরিবর্তন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় কী প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন? মতামত জানান কমেন্টে। আপনার মতামত আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা সংক্রান্ত আপনার কোন বিষয়ে জানার থাকলে সেগুলিও আমাদের জানাতে পারেন কমেন্টে।