আমি এই লেখায় গাছ আমাদের বন্ধু রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি আপনাদের জন্য, যা সহজ বাংলা ভাষায়। গাছ আমাদের প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। এটি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না, মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। গাছ ছাড়া পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও গাছ আমাদের নানাভাবে উপকার করে।
নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বন উজাড় হওয়ায় বাড়ছে ভূমিক্ষয়, তাপমাত্রা এবং বায়ুদূষণ। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। মানুষ তার কর্মফল ভোগ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে।
গাছ আমাদের বন্ধু রচনা
গাছ আমাদের বেঁচে থাকার সহায়ক। এটি প্রকৃতির অমূল্য উপহার। গাছ রক্ষা করলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব। চলুন, গাছ লাগাই, প্রকৃতি বাঁচাই।
ভূমিকা
গাছকে পৃথিবীর প্রথম প্রাণী বলা যেতে পারে। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়ার পর সূর্যের আলোকে প্রথম গ্রহণ করেছিল গাছ। ধীরে ধীরে তারা পৃথিবীকে সবুজ করে তুলেছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাছকে ‘মৃত্তিকার বীর সন্তান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকেই গাছপালা প্রকৃতিকে সজীব ও সুন্দর করে রেখেছে। কিন্তু তখন মানুষের কোনো ভূমিকা ছিল না।
মানুষের আশ্রয় ও সহায়ক
মানুষের আবির্ভাবের পর থেকেই গাছ তার জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আদিম মানুষ গাছকে আশ্রয়, খাদ্য ও বস্ত্রের উৎস হিসেবে ব্যবহার করত। সময়ের সাথে সাথে সভ্যতা বিকশিত হয়েছে, মানুষের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু গাছের গুরুত্ব কখনো কমেনি। আজও আমাদের জীবন গাছের উপর নির্ভরশীল।
প্রাচীন সভ্যতা ও গাছের সম্পর্ক
ভারতীয় সভ্যতার উৎপত্তি গাছপালা ঘেরা তপোবনগুলিতে। প্রাচীন ঋষিরা তপোবনে বসবাস করে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে জ্ঞান চর্চা করতেন। গাছ, ফলমূল, পশু-পাখি সবই তাদের জীবনের অংশ ছিল। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ ও মহাভারতের মতো প্রাচীন সাহিত্যগুলিও এই তপোবনেই রচিত হয়েছে। রামায়ণে রামচন্দ্রের বনবাস এবং মহাভারতের বনপর্ব গাছ ও অরণ্যের গুরুত্বকে ফুটিয়ে তোলে।
শহুরে সভ্যতা ও গাছের অবক্ষয়
আধুনিক নগরায়ণের যুগে গাছপালা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বন উজাড় হওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত কমে গেছে, মরুভূমি বাড়ছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “দাও ফিরে সে অরণ্য / লহো হে নগর।” অর্থাৎ, তিনি চেয়েছিলেন মানুষ যেন আবার প্রকৃতির কাছে ফিরে আসে এবং গাছপালা রক্ষায় সচেষ্ট হয়।
গাছের নিত্য প্রয়োজনীয়তা
গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমরা যে খাবার খাই, যে ওষুধ ব্যবহার করি, যে কাগজে লিখি, যে বাড়িতে থাকি—সবই গাছের উপর নির্ভরশীল। গাছ আমাদের ফল, শাকসবজি, ওষুধ, কাগজ, জ্বালানি, আসবাবপত্র এবং আরও অনেক কিছু দেয়। গাছ ছাড়া আমাদের সভ্যতার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য
গাছপালা আমাদের মনকে সতেজ করে, চোখকে শান্তি দেয় এবং পরিবেশকে সুন্দর করে। কিন্তু বন উজাড় হওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সুন্দরবনের মতো জায়গায় গাছ কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে, যা কৃষি ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বেশি করে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারি।
বনমহোৎসব ও গাছের গুরুত্ব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাছের গুরুত্ব বুঝতেন এবং তিনি চেয়েছিলেন মানুষ প্রকৃতির প্রতি আরও সচেতন হোক। এই লক্ষ্যে তিনি শান্তিনিকেতনে ‘বনমহোৎসব’ শুরু করেছিলেন। এই উৎসবের মাধ্যমে তিনি মরুভূমি রোধ এবং প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজও এই উৎসব পালিত হয় এবং সরকারও এটিকে সমর্থন করে।
গাছ লাগানো ও সংরক্ষণ
শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেগুলোর যত্ন নেওয়াও জরুরি। প্রতি বছর বনমহোৎসব উপলক্ষে স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ যত্ন না নেওয়ায় অনেক গাছ মরে যায়। আমাদের উচিত শুধু গাছ লাগানো নয়, সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দিকেও নজর দেওয়া।
উপসংহার
শহুরে জীবনের দূষণ ও কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এখন প্রকৃতির দিকে ফিরছে। যদিও আধুনিক জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়, তবুও আমরা আমাদের চারপাশে গাছ লাগিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পারি। শহরের ফাঁকা জায়গাগুলোতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারি। গাছ আমাদের বন্ধু, এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।