পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প রাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, উন্নত ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই ধরনের সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের খরচ আকাশছোঁয়া
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল রাজ্যের প্রতিটি নাগরিককে উন্নত ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এর ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিও এখন মানসম্মত চিকিৎসা পাচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার চাইছে যে, কোনো ব্যক্তি যেন চিকিৎসার অভাবে প্রাণ না হারান।
এই প্রকল্পটি রাজ্যের ২,৯১৪টি হাসপাতালে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি কোণায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি এতটাই সফল হয়েছে যে, বাসিন্দারা এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে দেওয়া নম্বরে কল করে সহজেই চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বাজেট ও বরাদ্দ
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্রতি বছর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দও বাড়ছে। নিচের টেবিলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলের পরিসংখ্যান দেওয়া হল:
বছর | বাজেট বরাদ্দ (কোটি টাকায়) | সুবিধাভোগীর সংখ্যা |
---|---|---|
২০২১-২২ | ২,২৬৩ | ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৩৯ |
২০২২-২৩ | ২,৬৩০ | ৫৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৯৪ |
২০২৩-২৪ | ২,৬৯৪ | ৬৪ লক্ষ ৯ হাজার ৬৩১ |
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, প্রকল্পটির প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা বাড়ছে।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সাফল্য শুধু সংখ্যায় নয়, গুণগত মানেও দেখা যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বহু মানুষ বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই প্রকল্পের প্রভাব অপরিসীম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলিও এখন শহরের বড় হাসপাতালগুলিতে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন।
সরকার আশা করছে যে, এই প্রকল্পটি আগামী দিনে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। এর মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতোই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাবে বলে সরকার আশাবাদী।
FAQs জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১. স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প কী?
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিক উন্নত ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
২. এই প্রকল্পের সুবিধা কী?
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
৩. কীভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন?
এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আপনাকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি করতে হবে। এরপর কার্ডে দেওয়া নম্বরে কল করে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারেন।
৪. এই প্রকল্পের জন্য কত টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে?
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রকল্পের জন্য ২,৬৯৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
৫. এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সরকার চাইছে যে, এই প্রকল্পটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাক এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা আরও উন্নত হোক।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিক উন্নত ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আগামী দিনে এই প্রকল্পটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে বলে আশা করা যায়।
এই প্রকল্পটি শুধু একটি সরকারি উদ্যোগ নয়, এটি রাজ্যের মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতোই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।