ঈদুল ফিতর আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। এই উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য সুখবর এসেছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাদের উৎসব ভাতার চেক ছাড় করা হয়েছে। এই টাকা তারা ২৩ মার্চ, রোববারের পর নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে তুলতে পারবেন। এই খবরে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে একটা আনন্দের হাওয়া বইছে। চলুন, এই বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানি।
মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতার চেক ছাড় ২০২৫
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, উৎসব ভাতার জন্য চারটি চেক বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো হলো:
- অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়
- রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়
- জনতা ব্যাংক লিমিটেড, স্থানীয় কার্যালয়
- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, স্থানীয় কার্যালয়
এই ব্যাংকগুলোতে চেকগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২৩ মার্চের পর তাদের নিজ নিজ এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে এই টাকা তুলতে পারবেন। এটা খুবই সহজ একটা প্রক্রিয়া। আপনি যদি এমপিওভুক্ত কোনো মাদরাসার শিক্ষক বা কর্মচারী হন, তাহলে আপনার পরিচয়পত্র আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে যান। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার ভাতার টাকা পেয়ে যাবেন।
এই উৎসব ভাতা কারা পাবেন, সেটা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় থাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন। তবে এটা শুধু এমপিওভুক্তদের জন্য। এমপিওভুক্ত মানে যারা সরকারি বেতনভাতার আওতায় আছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, কত টাকা পাবেন তারা? এটার পরিমাণ নির্ভর করছে তাদের মূল বেতনের ওপর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে:
- শিক্ষকদের জন্য: মূল বেতনের ২৫ শতাংশ।
- কর্মচারীদের জন্য: মূল বেতনের ৫০ শতাংশ।
এই হিসেবটা একটু বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দিই। ধরা যাক, একজন শিক্ষকের মূল বেতন ২০,০০০ টাকা। তাহলে তার উৎসব ভাতা হবে ২০,০০০-এর ২৫%, মানে ৫,০০০ টাকা। আর একজন কর্মচারীর মূল বেতন যদি ১৫,০০০ টাকা হয়, তাহলে তার ভাতা হবে ১৫,০০০-এর ৫০%, মানে ৭,৫০০ টাকা। এই টাকা ঈদের আগে হাতে পেলে পরিবারের জন্য কেনাকাটা বা অন্যান্য খরচে অনেক সুবিধা হবে।
দৈনিক শিক্ষা খবর আজকের মাদ্রাসা এমপিও ২০২৫
পদ | মূল বেতন (টাকা) | ভাতার হার | ভাতার পরিমাণ (টাকা) |
---|---|---|---|
শিক্ষক | ২০,০০০ | ২৫% | ৫,০০০ |
কর্মচারী | ১৫,০০০ | ৫০% | ৭,৫০০ |
শিক্ষক | ৩০,০০০ | ২৫% | ৭,৫০০ |
কর্মচারী | ১০,০০০ | ৫০% | ৫,০০০ |
ঈদ মানে আনন্দ, উৎসব আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু এই আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে টাকারও দরকার। বিশেষ করে যারা শিক্ষকতা বা মাদরাসায় চাকরি করেন, তাদের বেতন সবসময় খুব বেশি হয় না। তাই উৎসব ভাতা তাদের জন্য একটা বড় সাহায্য। এই টাকা দিয়ে তারা ঈদের জন্য নতুন জামা কিনতে পারেন, বাড়ির জন্য খাবারের আয়োজন করতে পারেন, এমনকি বাচ্চাদের জন্য ছোটখাটো উপহারও কিনতে পারেন।
আমার এক পরিচিত শিক্ষক আছেন, তিনি বলছিলেন, “ঈদের আগে এই ভাতা না পেলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এই টাকাটা পেলে একটু হলেও স্বস্তি পাই।” এটা শুনে বোঝা যায়, এই উৎসব ভাতা শুধু টাকা নয়, এটা তাদের জন্য একটা মানসিক শান্তিও বটে।
সরকারের ভূমিকা এবং সময়মতো পদক্ষেপ
এই উৎসব ভাতার চেক ছাড়ার ব্যাপারে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে। তারা ঈদের অনেক আগেই এই কাজটা সেরে ফেলেছে, যাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা সময়মতো টাকা হাতে পান। এটা একটা ভালো দিক। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি কাজে দেরি হয়ে যায়, আর মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। কিন্তু এবার তারা ২৩ মার্চের মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে ফেলেছে। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
তবে কিছু শিক্ষকের মনে প্রশ্ন আছে। তারা বলছেন, “ভাতার পরিমাণটা কি আরেকটু বাড়ানো যায় না?” এটা সত্যি যে, ২৫% বা ৫০% ভাতা অনেকের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই টাকা দিয়ে সব খরচ মেটানো কঠিন। তবে যতটুকু দেওয়া হয়েছে, তাতেও অনেকে খুশি।
কিছু পরামর্শ এবং প্রত্যাশা
এই উৎসব ভাতা পাওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকতে পারে। প্রথমত, তারা যেন ব্যাংকে গিয়ে দ্রুত টাকা তুলে নেন। কারণ ঈদ যত কাছে আসবে, ব্যাংকে ভিড়ও বাড়বে। দ্বিতীয়ত, এই টাকা খরচ করার সময় একটু পরিকল্পনা করে করলে ভালো হয়। যেমন, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আগে কিনে নেওয়া, তারপর বাকি টাকা দিয়ে অন্য কিছু করা।
আর ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যাশা হলো, সরকার যেন এই ভাতার পরিমাণ একটু বাড়ানোর কথা ভাবে। যদি শিক্ষকদের ৩০-৪০% আর কর্মচারীদের ৬০-৭০% ভাতা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের ঈদ আরও ভালোভাবে কাটবে। এছাড়া চেক ছাড়ার প্রক্রিয়াটা যেন আরও সহজ হয়, সেটাও দেখা দরকার।
সব মিলিয়ে, ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতার চেক ছাড় মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য একটা বড় উপহার। এই টাকা তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করবে। ২৩ মার্চের পর তারা যখন ব্যাংকে যাবেন, তখন তাদের চোখে-মুখে আনন্দ দেখা যাবে। এটা শুধু টাকার ব্যাপার নয়, এটা তাদের প্রতি সম্মান আর দায়িত্বেরও প্রকাশ। তাই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও ভালোভাবে চলবে। দৈনিক শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সবার আগে জানতে আজকাল বাংলাকে অনুসরণ করুন। আপনি এই বিষয়ের আপডেট পেতে আজকাল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।