বন্ধুরা, গত কয়েকদিন ধরে দেশের রাজনীতির মাঠ গরম। কারণটা হলো লোকসভায় পাস হওয়া নতুন Immigration and Foreign Nationals Bill, 2025। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিল নিয়ে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা শুনে অনেকেই ভ্রু কুঁচকে ফেলেছেন, আবার অনেকে সমর্থনও করছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়”। অর্থাৎ, এখানে যে কেউ এসে ঢুকে পড়তে পারবে না। এই বিলের মূল লক্ষ্য হলো দেশের নিরাপত্তা শক্ত করা আর অবৈধভাবে ঢুকে পড়া মানুষদের, বিশেষ করে Bangladeshi Infiltrators আর রোহিঙ্গাদের, ঠেকানো। কিন্তু এই বিল আর শাহের বক্তব্য নিয়ে এখন চলছে তুমুল বিতর্ক। বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইও তুঙ্গে উঠেছে। চলো, বিষয়টা একটু খোলাসা করে দেখি।
ভারত ধর্মশালা নয় – নতুন বিলটা আসলে কী
লোকসভায় প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর এই নতুন Immigration Bill পাস হয়েছে। শাহ বলেছেন, এই বিলের উদ্দেশ্য হলো দেশের নিরাপত্তার জন্য যারা হুমকি, তাদের ঢুকতে না দেওয়া। তবে যারা বৈধভাবে আসবে—যেমন পর্যটক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী বা চিকিৎসার জন্য রোগী—তাদের জন্য দরজা খোলা থাকবে। শাহের কথায়, “যারা দেশের উন্নয়নে সাহায্য করবে, কেবল তাদেরই স্বাগত”। এছাড়া তিনি বলেছেন, এই বিলের ফলে দেশের অর্থনীতি আর ব্যবসাও উপকার পাবে। এখন পর্যন্ত তো বেশ ভালোই শোনাচ্ছে, তাই না? কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে অন্য জায়গায়।
অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে শাহের উদ্বেগ
অমিত শাহ এই বিল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে Bangladeshi Infiltrators আর রোহিঙ্গাদের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এরা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। বিশেষ করে আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এই সমস্যা বেশি। শাহের অভিযোগ, কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আসামে প্রচুর অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়েছে। আর এখন তৃণমূলের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে এরা ঢুকছে। তিনি আরও বলেছেন, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানা দিয়ে ভুয়ো আধার কার্ড পাচ্ছে”। এমনকি সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজও থেমে আছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমি দিচ্ছে না। শাহের দাবি, প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার সীমান্ত বেড়ার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো? আসাম আর ত্রিপুরার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যেও তো অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়। কিন্তু সেখানে শাহ কিছু বলেননি। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তাহলে কি এটা শুধুই রাজনীতি?
তৃণমূলের জবাব
তৃণমূল কংগ্রেস এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব তো BSF বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের। তাহলে অনুপ্রবেশ হলে দোষটা কেন রাজ্যের ওপর চাপানো হচ্ছে? তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান তো সরাসরি বলে দিয়েছেন, “যদি BSF তার কাজ ঠিকঠাক না করে, তাহলে এটা কেন্দ্রের ব্যর্থতা, রাজ্যের নয়”। তিনি আরও বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে BSF-এর এলাকা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। তবু অনুপ্রবেশ থামছে না। অথচ গুজরাটে BSF-এর এলাকা ৮০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। তাহলে কি নিয়ম সব জায়গায় এক নয়?
তৃণমূলের আরেকটা যুক্তি হলো, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য জমির সমস্যা দেখানোটা কেবল একটা রাজনৈতিক অজুহাত। আবু তাহের খান তো শাহের পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করে বলেছেন, “সীমান্ত সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হলে অমিত শাহের দায়িত্ব ছাড়া উচিত”। এখন এই বিতর্ক যে আরও জমে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।
বিলের ভালো-মন্দ
এই নতুন Immigration Bill নিয়ে দুই দিকেই কথা আছে। একদিকে, এটা সত্যি যে অবৈধ অনুপ্রবেশ দেশের জন্য সমস্যা। সীমান্ত দিয়ে যদি যে-কেউ ঢুকে পড়ে, তাহলে নিরাপত্তা আর অর্থনীতি—দুটোতেই ঝুঁকি থাকে। শাহের যুক্তি, যারা দেশের ভালোর জন্য কাজ করবে, তাদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। এটা শুনে অনেকে বলছেন, ঠিক আছে, এতে দেশের উন্নতি হতে পারে।
কিন্তু অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছে, এটা শুধু রাজনীতির খেলা। পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মতো জায়গায় এই ইস্যুকে ভোটের হাতিয়ার করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে রাজ্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আবার এটাও প্রশ্ন, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ যদি জমির অভাবে থেমে থাকে, তাহলে কেন্দ্র আর রাজ্য মিলে এটা সমাধান করতে পারছে না? এই দুইয়ের টানাপোড়েনে সাধারণ মানুষই তো বিপদে পড়ছে।
এই বিল পাস হওয়ার পর থেকে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা সহজে থামবে বলে মনে হয় না। সীমান্ত নিরাপত্তা আর অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কথা আগামী দিনেও চলবে। বিজেপি বলছে, এটা দেশের ভালোর জন্য। তৃণমূল বলছে, এটা কেন্দ্রের ব্যর্থতা লুকোনোর চেষ্টা। এর মাঝে সত্যিটা কী, তা বোঝা মুশকিল। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার, এই বিল শুধু আইনের বইয়ে থাকবে না, এটা রাজনীতির ময়দানেও বড় ভূমিকা নেবে।
বন্ধুরা, তোমরা কী ভাবছ এই নিয়ে? অমিত শাহের কথায় যুক্তি আছে, না তৃণমূলের অভিযোগই ঠিক? আমার মনে হয়, এই বিতর্কের উত্তর পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত, চোখ-কান খোলা রেখে দেখতে হবে, এই নতুন বিল আদৌ দেশের নিরাপত্তা আর উন্নতি ডেকে আনবে কি না। তোমাদের মতামত কী, জানিও!