Gukesh Dommaraju, যিনি গুকেশ ডি নামে পরিচিত, ভারতীয় দাবা জগতের এক অসাধারণ প্রতিভা। তার অল্প বয়সেই অর্জিত সাফল্য শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের দাবা ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৪-এ গুকেশ বিশ্বের ১৮তম দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন একটি অধ্যায় সূচনা করেছেন। এই নিবন্ধে আমরা গুকেশের শৈশব, তার সাফল্যের কাহিনী এবং তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলো বিশদভাবে তুলে ধরব।
Gukesh Dommaraju এর শৈশব ও শিক্ষা
ডোম্মারাজু গুকেশে ২৯ মে ২০০৬ সালে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে এক তেলুগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডাঃ রজনীকান্ত একজন কান, নাক এবং গলার বিশেষজ্ঞ এবং তার মা ডাঃ পদ্মা একজন অণুজীব বিজ্ঞানী। ছোটবেলা থেকেই গুকেশ ছিলেন মনোযোগী এবং প্রতিভাধর।
গুকেশের দাবার যাত্রা শুরু হয় মাত্র সাত বছর বয়সে, যখন তার পরিবার তার প্রতিভা উপলব্ধি করে। Gukesh Dommaraju চেন্নাইয়ের মেল আয়নামবাক্কামের ভেলাম্মাল বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি দাবা চর্চা শুরু করেন।
গুকেশ ২০১৩ সালে নিয়মিত অনুশীলন শুরু করেন। সপ্তাহে মাত্র তিন ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি দ্রুত স্থানীয় টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জন করেন। অল্প সময়েই তার প্রতিভা এতটাই পরিস্ফুটিত হয় যে তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন।
Gukesh Dommaraju এর প্রাথমিক সাফল্য
ডোম্মারাজু গুকেশের সাফল্যের যাত্রা শুরু হয় তার শৈশব থেকেই।
১. আন্তর্জাতিক দাবায় পদার্পণ
গুকেশ ২০১৫ সালে এশিয়ান স্কুল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-৯ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে বিশ্ব যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
২. গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন
২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি, মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে, তিনি গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেন। তখন তিনি ইতিহাসের তৃতীয় কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ডমাস্টার ছিলেন।
৩. আন্তর্জাতিক মঞ্চে Gukesh Dommaraju এর প্রভাব বিস্তার
২০১৮ সালের এশিয়ান যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে গুকেশ পাঁচটি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। এর মধ্যে ছিল র্যাপিড, ব্লিটজ এবং ক্লাসিকাল ফর্ম্যাটে ব্যক্তিগত ও দলগত বিজয়।
পেশাগত জীবনের Gukesh Dommaraju এর সাফল্য
১. ২০২২: দাবা অলিম্পিয়াড এবং শীর্ষ রেটিং অর্জন
২০২২ সালে গুকেশ দাবা অলিম্পিয়াডে ভারতের দ্বিতীয় দলের হয়ে খেলেন এবং প্রথম বোর্ডে স্বর্ণপদক জেতেন। ওই বছর তিনি ২৭০০ রেটিং অতিক্রম করেন, যা তাকে বিশ্বের সেরা দাবাড়ুদের কাতারে নিয়ে যায়।
২. ২০২৩: বিশ্বকাপ এবং শীর্ষস্থান অর্জন
২০২৩ সালে, Gukesh Dommaraju বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছান এবং সেই বছরই তিনি ভারতের শীর্ষস্থানীয় দাবাড়ু হন, বিশ্বনাথন আনন্দকে ছাড়িয়ে।
৩. ২০২৪: বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া
২০২৪ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট Gukesh Dommaraju জিতে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত ম্যাচে তিনি চীনের ডিং লিরেনকে পরাজিত করে ১৮তম বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হন।
২০২৪ চ্যাম্পিয়নশিপের রোমাঞ্চ
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এর শেষ গেমটি ছিল এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা।
- ডিং লিরেনের চ্যালেঞ্জ: ডিং ছিলেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, যিনি ১৩তম গেমের পর গুকেশের সঙ্গে সমতায় ছিলেন।
- গেম ১৪-এর নাটকীয় মুহূর্ত: ৫৫তম চালে ডিং একটি বড় ভুল করেন (Rf2??), যা গুকেশকে জয়ের সুযোগ এনে দেয়।
- গুকেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়া: ৫৮টি চালে তিনি গেমটি জিতে নেন, চ্যাম্পিয়নশিপের স্কোর দাঁড়ায় ৭.৫-৬.৫।
গুকেশের অনুপ্রেরণা এবং বিশেষ দক্ষতা
ডোম্মারাজু গুকেশ শুধুমাত্র তার দক্ষতার জন্য বিখ্যাত নন, তার মনোযোগ এবং ধৈর্যের জন্যও প্রশংসিত।
- কৌশলগত চিন্তাভাবনা: গুকেশ যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করতে দক্ষ।
- মানসিক দৃঢ়তা: চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও তিনি স্থির থেকে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন।
- তরুণদের অনুপ্রেরণা: গুকেশ নতুন প্রজন্মের দাবাড়ুদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গুকেশের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
ডোম্মারাজু গুকেশের সাফল্য এখানেই শেষ নয়। তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলো আরও উজ্জ্বল:
১. বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখা:
গুকেশের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখা এবং নিজেকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে শীর্ষস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা।
২. ভারতের দাবার উন্নয়ন:
গুকেশ তরুণ দাবাড়ুদের প্রশিক্ষণ এবং ভারতের দাবা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান।
৩. বৈশ্বিক রেকর্ড অর্জন:
গুকেশ ২৮০০+ রেটিং অর্জন করে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠতম সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।
৪. অলিম্পিয়াডে দলীয় স্বর্ণপদক:
তিনি ভারতীয় দলকে অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জেতানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ডোম্মারাজু গুকেশের সাফল্য কেবল ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার প্রশংসা এবং স্বীকৃতি প্রতিদিন বাড়ছে।
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে “ঐতিহাসিক এবং অনুকরণীয়” আখ্যা দেন।
- বিশ্ব দাবা সংস্থা (FIDE) তার পারফরম্যান্সকে “অসাধারণ” বলে অভিহিত করে।
- গ্যারি কাসপারভ এবং বিশ্বনাথন আনন্দের মতো ব্যক্তিত্বরা তার প্রশংসা করেছেন।
উপসংহার
ডোম্মারাজু গুকেশ, তার দক্ষতা এবং কৌশল দিয়ে, ভারত এবং বিশ্বের দাবা ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার শৈশব থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যাত্রা, এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য সবই আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
গুকেশ কেবল একটি নাম নয়; এটি একটি প্রতিভা, অধ্যবসায় এবং সাফল্যের গল্প। তার অনুপ্রেরণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতে তাকে আরও বড় সাফল্য এনে দেবে এবং ভারতের ক্রীড়া জগতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।