বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল সম্প্রতি সরকারি নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৪-২০২৫ প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নার্সিং শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি জানানো হয়েছে। যারা নার্সিং পড়তে চান, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ, আবেদনের সময়, কোর্সের ধরন, যোগ্যতা, আসন বণ্টন এবং পরীক্ষার মানবণ্টন সবকিছুই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এখানে এই সব তথ্য সহজ ভাষায় উপস্থাপন করছি, যাতে সবাই বুঝতে পারে।
সরকারি নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৪-২০২৫ তারিখ
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কিছু নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হয়েছে। এই তারিখগুলো মনে রাখা খুব জরুরি। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
- অনলাইন আবেদন শুরু: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- অনলাইন আবেদন শেষ: ১২ মার্চ ২০২৫
- ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ: ১৩ মার্চ ২০২৫
- অনলাইন প্রবেশপত্র ডাউনলোড: ১৫ এপ্রিল ২০২৫
- ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫
এই তারিখগুলো মেনে চলতে হবে। যদি কেউ সময়মতো আবেদন বা ফি জমা না দিতে পারে, তাহলে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।
সরকারি নার্সিং ভর্তির বিভিন্ন কোর্স
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় তিনটি আলাদা কোর্সের জন্য আবেদন করা যাবে। প্রতিটি কোর্সের সময়সীমা এবং ধরন ভিন্ন। এগুলো হলো:
- বিএসসি ইন নার্সিং: এটি ৪ বছর মেয়াদি কোর্স।
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি: এটি ৩ বছর মেয়াদি।
- ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি: এটিও ৩ বছর মেয়াদি।
এই তিনটি কোর্সের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা হবে। তাই যারা আবেদন করতে চান, তাদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী কোর্স বেছে নিতে হবে।
সরকারি নার্সিং ভর্তির আবেদনের যোগ্যতা
নার্সিং ভর্তির জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলো না মানলে আবেদন করা যাবে না। শর্তগুলো হলো:
- এসএসসি পরীক্ষা: ২০২০, ২০২১ বা ২০২২ সালে পাস করতে হবে।
- এইচএসসি পরীক্ষা: ২০২২, ২০২৩ বা ২০২৪ সালে পাস করতে হবে।
- ব্যবধান: এসএসসি ও এইচএসসির মধ্যে ব্যবধান ৩ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
এই শর্তগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। যদি কারও ফলাফল এই সময়ের মধ্যে না পড়ে, তাহলে তারা আবেদনের জন্য যোগ্য হবে না।
আসন বণ্টন
নার্সিং কোর্সগুলোতে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। এটি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
- বিএসসি ইন নার্সিং ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি:
- সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০% আসন পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত।
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২০% আসন পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত।
- ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি: এই কোর্সে শুধু মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে।
এই বণ্টনের কারণে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই সুযোগ রয়েছে। তবে মিডওয়াইফারি কোর্সটি শুধু মেয়েদের জন্য।
আবেদনের ন্যূনতম পয়েন্ট
প্রতিটি কোর্সের জন্য আলাদা ন্যূনতম জিপিএ প্রয়োজন। এটি না থাকলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
- বিএসসি ইন নার্সিং:
- এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে মোট জিপিএ ৭ থাকতে হবে।
- কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩-এর নিচে হলে আবেদন করা যাবে না।
- এসএসসিতে জীববিজ্ঞানে জিপিএ ২.৫ থাকতে হবে।
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি:
- এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে মোট জিপিএ ৬ থাকতে হবে।
- কোনো একটি পরীক্ষায় জিপিএ ২.৫-এর নিচে হলে আবেদন করা যাবে না।
এই পয়েন্টগুলো মাথায় রেখে আবেদন করতে হবে। ফলাফল ভালো না হলে আবেদনের সুযোগ পাওয়া যাবে না।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন
ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয় থেকে প্রশ্ন আসবে। প্রতিটি কোর্সের জন্য মানবণ্টন আলাদা।
বিএসসি ইন নার্সিং
বিষয় | নম্বর |
---|---|
বাংলা | ২০ |
ইংরেজি | ২০ |
গণিত | ১০ |
বিজ্ঞান (জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন) | ৪০ |
সাধারণ জ্ঞান | ১০ |
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি
বিষয় | নম্বর |
---|---|
বাংলা | ২০ |
ইংরেজি | ২০ |
সাধারণ গণিত | ১০ |
সাধারণ বিজ্ঞান | ৩০ |
সাধারণ জ্ঞান | ২০ |
পরীক্ষায় মোট ১৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর এমসিকিউ এবং ৫০ নম্বর আসবে এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ থেকে। জিপিএ গণনার নিয়ম হলো—এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ যোগ করে ৫ দিয়ে গুণ করা হবে। উত্তীর্ণ হতে এমসিকিউ-তে ৪০ নম্বর পেতে হবে। তবে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে ভালো ফলাফল করতে হবে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার ফি
আবেদনের জন্য ফি জমা দিতে হবে। কোর্স অনুযায়ী ফি আলাদা। নিচে তা দেওয়া হলো:
- বিএসসি নার্সিং: ৭০০ টাকা
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি: ৫০০ টাকা
এই ফি টেলিটক প্রিপেইড সিম দিয়ে জমা দিতে হবে। ফি জমা না দিলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
নার্সিং একটি সম্মানজনক পেশা। এটি শুধু চাকরির সুযোগই দেয় না, মানুষের সেবা করার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার সুযোগও দেয়। বাংলাদেশে নার্সিং পেশার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন সংরক্ষণের মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
পরীক্ষায় ভালো করতে হলে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান—এই বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। বিশেষ করে বিএসসি নার্সিং-এর জন্য জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন একটু একটু করে পড়লে পরীক্ষার আগে চাপ কম পড়বে। এছাড়া পুরোনো প্রশ্ন দেখে প্রস্তুতি নিলে ভালো ফল করা সহজ হবে।
সারাংশ
২০২৫ সালের নার্সিং ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারে। তবে সময়মতো আবেদন, ফি জমা এবং প্রস্তুতি এই তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। যারা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবে, তারা ভবিষ্যতে নার্সিং পেশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই দেরি না করে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন। শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সবার আগে পেতে আজকাল বাংলাকে নিয়মিত ফলো করুন।