Arakan Army: দেখুন, আরাকান আর্মি কারা! কি তাদের ইতিহাস

Arakan Army: দেখুন, আরাকান আর্মি কারা! কি তাদের ইতিহাস

Arakan Army মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন, যা নিজেদের ‘আরাকান জাতির সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার’ এবং ‘স্বায়ত্তশাসনের’ লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে। এটি 2009 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দ্রুত একটি শক্তিশালী সামরিক সংগঠনে পরিণত হয়। তাদের কার্যক্রমের ফলে রাখাইন রাজ্যের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।


Arakan Army এবং এর ইতিহাস ও উত্থান

আরাকান আর্মি 2009 সালের 10 এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের লাইজায় অবস্থিত ছিল। কাচিন স্বাধীনতা আর্মি (KIA)-এর সামরিক প্রশিক্ষণ একাডেমিতে এর প্রথম সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রথমদিকে, Arakan Army কেবলমাত্র প্রশিক্ষণের উপর মনোযোগ দিলেও 2011 সালে কাচিন সংঘাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেদের সামরিক ক্ষমতা প্রকাশ করে। এর ফলে তারা কাচিন স্বাধীনতা আর্মির ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে ওঠে।

সংঘাতের বিস্তার

2014 সাল থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে তাদের উপস্থিতি বাড়ায়। রাখাইন ও চীন সীমান্তে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করে। তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
2024 সালের মে মাসে তারা দাবি করে যে, তাদের সদস্য সংখ্যা 40,000-এর বেশি। তবে বিশ্লেষকরা এই সংখ্যা 15,000 থেকে 20,000-এর মধ্যে বলে অনুমান করেন।


আরাকান আর্মির লক্ষ্য ও আদর্শ

স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা

আরাকান আর্মির প্রধান লক্ষ্য হল রাখাইন রাজ্যের জন্য স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা এবং ঐতিহাসিকভাবে হারানো সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

জাতীয় পরিচয়ের সংরক্ষণ

রাখাইন জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয় রক্ষার জন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। Arakan Army এই অঞ্চলকে বহুজাতিক ও সমন্বিত একটি সমাজ হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রোহিঙ্গা বিরোধিতা

তবে তাদের কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য এবং শত্রুতা স্পষ্ট। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।


সামরিক কার্যক্রম ও সংঘাত

২০১৫-২০২০: সামরিক অভিযানের বিস্তার

Arakan Army 2015 সালে মিয়ানমারের তাতমাদাও (সেনাবাহিনী)-এর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা কাচিন এবং শান রাজ্যে সামরিক অভিযান চালায়। 2019 সালে উত্তর রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়, যেখানে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি দখল করে।
2020 সালে, Arakan Army একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। তবে এই সময়ে তারা অঞ্চলটিতে তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেমন—কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিতরণ।

২০২১-বর্তমান: মিয়ানমার গৃহযুদ্ধ

2021 সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর, মিয়ানমারের সামরিক সরকার (SAC) আরাকান আর্মির ওপর থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তকমা সরিয়ে নেয়। তবে 2023-2024 সালে রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ পুনরায় তীব্র হয়ে ওঠে।

২০২৪ সালের অভিযান

2024 সালে, Arakan Army বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু এবং বুথিডাং দখল করে। তারা মিয়ানমারের 270 কিমি সীমান্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মংডু দখলের সময় তারা মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (BGP) অনেক সদস্যকে আটক করে।


রোহিঙ্গা বিতর্ক

মানবাধিকার লঙ্ঘন

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংস করেছে এবং তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্ক

যদিও Arakan Army দাবি করে যে তারা রাখাইনের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে, তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের বৈষম্যমূলক আচরণ স্পষ্ট।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীও একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত।


আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রভাব

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক

আরাকান আর্মির কার্যক্রম বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

চীন ও ভারতের প্রভাব

আরাকান আর্মি চীনের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ভারতের কালাদান মাল্টি-মডাল প্রকল্পে তাদের বিরোধিতা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে।


TMC রাজ্যসভা উপনির্বাচন প্রার্থী

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা

  1. শান্তি আলোচনা: মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি হলে রাখাইন অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব।
  2. রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান: আরাকান আর্মি যদি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করে, তবে এই সমস্যা সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
  3. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বাংলাদেশ, ভারত, এবং চীনের মতো দেশের সহযোগিতা এই সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহার

আরাকান আর্মি (Arakan Army) একটি জটিল এবং বহুমুখী সশস্ত্র সংগঠন, যা রাখাইন অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। তবে তাদের কর্মকাণ্ড এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের বিষয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


Join WhatsApp

Join Now