ইদ (EID) আসছে, আর এই উৎসবকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) নিয়ে এসেছে একটি বড় ঘোষণা। দেশের ৩২ লক্ষ মুসলিম পরিবারকে বিশেষ উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সৌগত-এ-মোদী’। বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা এই প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মুসলিম পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে চায়। এই কিটগুলো ইদের দিন মসজিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। তবে এটি শুধু উপহার দেওয়ার গল্প নয়, এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর উদ্দেশ্য। চলুন, বিস্তারিত জানি।
এই Sougat e Modi 2025 কিটে
বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চা জানিয়েছে, ‘সৌগত-এ-মোদী’ কিটে থাকবে খাদ্যসামগ্রী, কাপড় এবং আরও অনেক কিছু।
- খাদ্য: সেমাই, খেজুর, শুকনো ফল, চিনি ইত্যাদি।
- মহিলাদের জন্য: স্যুটের কাপড়।
- পুরুষদের জন্য: কুর্তা-পায়জামা।
প্রতিটি কিটের দাম হবে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই কিটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গরিব মানুষেরা ইদের আনন্দ ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন। এই উপহারের মাধ্যমে তাদের উৎসবের খরচের একটা বড় অংশ কমে যাবে।
কীভাবে বিতরণ হবে এই কিট
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চা বড় পরিকল্পনা করেছে। দেশের ৩২,০০০ মসজিদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদের ৩২,০০০ কর্মী। এই কর্মীরা মসজিদের সাহায্যে গরিব ও অভাবী মানুষদের খুঁজে বের করবেন। তারপর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এই কিট। মোট ৩২ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
প্রচারণাটি শুরু হবে মঙ্গলবার, দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার নির্দেশে এই কার্যক্রম চলবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, গরিব মুসলিম পরিবারগুলো যেন ইদের সময় কোনো সমস্যা ছাড়াই উৎসব পালন করতে পারে।
বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার জাতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকী বলেছেন, “রমজান মাসে গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করার কথা বলা হয়। আমরা সেই কাজই করছি।” তিনি আরও জানান, এই প্রকল্প শুধু ইদের জন্য নয়। তারা গুড ফ্রাইডে, ইস্টার, নওরোজ এবং ভারতীয় নববর্ষেও এই ধরনের কিট বিতরণ করবে। তাদের মতে, এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়বে।
জামাল সিদ্দিকী আরও বলেন, “জেলা পর্যায়ে ইদ মিলন অনুষ্ঠানও করা হবে।” এতে মানুষের মধ্যে ভাইচারা আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও আছে
বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার জাতীয় মিডিয়া ইনচার্জ ইয়াসির জিলানি এই প্রকল্পের আরেকটি দিক তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “‘সৌগত-ই-মোদী’ প্রকল্পটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির কল্যাণমূলক কাজের প্রচার করবে। এর পাশাপাশি বিজেপি ও এনডিএ-র জন্য রাজনৈতিক সমর্থনও বাড়বে।” এই প্রচারণা রমজান ও ইদকে কেন্দ্র করে হওয়ায় এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
এখান থেকে স্পষ্ট যে, এই উদ্যোগের পেছনে শুধু সমাজসেবা নয়, রাজনৈতিক লাভের হিসেবও রয়েছে। বিজেপি চায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তি আরও ভালো করতে।
এই প্রচারণার ঘোষণা করা হয়েছে গত রবিবার। আর মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে এই যাত্রা শুরু হওয়ার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
বিভাগ | বিস্তারিত | মন্তব্য |
---|---|---|
খাদ্যসামগ্রী | সেমাই, খেজুর, শুকনো ফল, চিনি | ইদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ |
মহিলাদের পোশাক | স্যুটের কাপড় | নতুন পোশাকে উৎসবের আনন্দ |
পুরুষদের পোশাক | কুর্তা-পায়জামা | ঐতিহ্যবাহী পোশাক |
কিটের দাম | ৫০০-৬০০ টাকা | সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য |
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিজেপি অনেক কিছু পেতে চায়। প্রথমত, গরিব মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য ইদ সহজ হবে। তারা টাকার চিন্তা না করে উৎসব উদযাপন করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, বিজেপির ইমেজ আরও ভালো হবে। অনেকে হয়তো মনে করবেন যে বিজেপি শুধু একটি সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সবার জন্য কাজ করে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক সমর্থন বাড়বে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যদি এই প্রকল্প ভালো সাড়া পায়, তাহলে ভোটের হিসেবেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
আমার মতামত
এই উদ্যোগ দেখে মনে হয়, বিজেপি একদিকে যেমন সমাজসেবার কথা ভাবছে, তেমনি রাজনীতির কথাও মাথায় রেখেছে। গরিব মানুষের জন্য এটা সত্যিই একটা ভালো কাজ হতে পারে। কিন্তু এর পেছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে যাই হোক, গরিব মানুষ যদি এর থেকে উপকার পায়, তাহলে এটা ইতিবাচকই বলতে হবে।
ইদের আগে বিজেপির এই ‘সৌগত-এ-মোদী’ প্রকল্প অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ৩২ লক্ষ মুসলিম পরিবারকে উপহার দেওয়ার এই পরিকল্পনা সফল হলে, এটি অনেকের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসবে। পাশাপাশি বিজেপির জন্যও এটি একটি বড় সুযোগ হতে পারে। তবে এর ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত, ইদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতে বিজেপি প্রস্তুত। আপনার কী মনে হয় এই প্রকল্প নিয়ে? এরকম তথ্য সবার আগে পেতে আজকাল বাংলাকে অনুসরণ করুন।