দেশজুড়ে মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে একের পর এক প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। রাজ্য থেকে কেন্দ্র, সব সরকারই এই দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভান্ডার, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন প্রকল্প ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে। এবার দিল্লি সরকারও মহিলাদের জন্য একটি বড় ঘোষণা করেছে। ৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবসের মধ্যেই দিল্লির মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে ২৫০০ টাকা পাঠানো হবে(mahila samriddhi yojana 2500 per month)। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে “মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা”।
BJP সরকার আনল মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা
Mahila samriddhi yojana scheme: দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি মহিলাদের মাসিক ২১০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এবার ক্ষমতায় এসে বিজেপি সেই প্রতিশ্রুতি ছাড়িয়ে গেছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ঘোষণা করেছেন, “আমরা দিল্লির প্রতিটি মহিলাকে আর্থিক সহায়তা দিতে চাই। যাতে তারা আরো আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।” এই কথারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মহিলা সমৃদ্ধি যোজনায়।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে দিল্লির মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি ২৫০০ টাকা পাঠানো হবে। এই টাকা মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যেই ৪৮ জন বিজেপি বিধায়ককে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা শুধু তাদের নিজেদের জন্যই নয়, সমাজ ও দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী মহিলারা পরিবার ও সমাজে তাদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করতে পারেন। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবেন। এই ধরনের প্রকল্প মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা উন্নত করে।
দিল্লির এই নতুন প্রকল্পের আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মহিলাদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশেও একই ধরনের প্রকল্প চালু হয়েছে। এই রাজ্যগুলোতে মহিলাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন– রাজ্যে রানী লক্ষ্মীবাই স্কুটি যোজনা।
দিল্লির মহিলা সমৃদ্ধি যোজনার বৈশিষ্ট্য – Mahila samriddhi yojana kya hai
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
প্রতিমাসে প্রদত্ত অর্থ | ২৫০০ টাকা |
লক্ষ্য | মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি |
প্রথম অর্থপ্রদান | ৮ই মার্চ, ২০২৪ (বিশ্ব নারী দিবস) |
প্রত্যক্ষ সুবিধা | টাকা সরাসরি মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হবে |
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক | ৪৮ জন বিজেপি বিধায়ককে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে |
এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে কতটা সুষ্ঠুভাবে এটি বাস্তবায়িত হয় তার উপর। টাকা সরাসরি মহিলাদের একাউন্টে পাঠানো হলে দুর্নীতির সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও, এই টাকা যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সরকারের উচিত মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা এই টাকা কাজে লাগিয়ে আরও আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন।
আরও পড়ুন– প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ স্কিম 2025।
সমাজের অর্থনীতিতে প্রভাব
মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা শুধু তাদের নিজেদের জীবনই বদলায় না, সমাজ ও অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী মহিলারা পরিবারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে বেশি নজর দেন। এতে সমাজের সার্বিক উন্নতি হয়। এছাড়াও, মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়লে দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।
যদিও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রশংসনীয়, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। প্রথমত, এই প্রকল্পের আওতায় সব মহিলা যাতে ঠিকভাবে সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, টাকা পাওয়ার পর মহিলারা যাতে সঠিকভাবে তা ব্যবহার করেন, সেদিকেও নজর দিতে হবে। এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্প চালু রাখতে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা কতটা, সেটাও বিবেচনার বিষয়।
দিল্লি সরকারের মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দিল্লির মহিলারা আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবেন। তবে এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর। ৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবসে এই প্রকল্পের প্রথম অর্থপ্রদান হবে। এখন সকলের নজর এই তারিখের দিকে। আশা করা যায়, এই প্রকল্প দিল্লির মহিলাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলবে।