আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি আজ কলকাতায় সোনার দাম কত ? আজকের সোনার দাম কত 10 গ্রাম ? সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন। স্বর্ণ শুধু একটি ধাতু নয়, এটি সম্পদ, সৌন্দর্য এবং বিনিয়োগের প্রতীক। বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতিতে স্বর্ণের গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়েতে, উৎসবে বা শুভ অনুষ্ঠানে স্বর্ণের গহনা না হলে যেন চলেই না। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের জানাব কলকাতায় ২৪ ক্যারেট পাকা সোনার বাট, ২৪ ক্যারেট খুচরো পাকা সোনা এবং হলমার্ক যুক্ত খাঁটি সোনার দাম সম্পর্কে। এছাড়াও, গত এক সপ্তাহের স্বর্ণের দামের উঠানামা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
স্বর্ণ পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে একটি। এর সৌন্দর্য, স্থায়িত্ব এবং বিরলতা এটিকে বিশেষ করে তুলেছে। প্রাচীনকাল থেকেই স্বর্ণ মুদ্রা, গহনা এবং সম্পদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ভারতীয় সমাজে স্বর্ণ শুধু গহনা নয়, এটি বিনিয়োগেরও একটি বড় মাধ্যম। মেয়েদের প্রসাধনী থেকে শুরু করে বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের চাহিদা সব সময়ই উচ্চ।
আজকের আধুনিক বাজারে স্বর্ণের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। এর অভাব, স্থায়িত্ব এবং সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এটিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কলকাতায় স্বর্ণের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা তৈরি হচ্ছে এবং মানুষ স্বর্ণ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।
আজ কলকাতায় সোনার দাম কত
ধরণ | ওজন | মূল্য (টাকা) |
---|---|---|
পাকা সোনা | ১০ গ্রাম | ৮৬,৬৫০ |
গহনা সোনা | ১০ গ্রাম | ৮৭,১০০ |
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট) | ১০ গ্রাম | ৮২,৭৫০ |
রূপার বাট | প্রতি কেজি | ৯৬,৫০০ |
রূপা খুচরো | প্রতি কেজি | ৯৬,৬০০ |
গত এক সপ্তাহে কলকাতায় স্বর্ণের দামে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি দাম কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে ২২ ফেব্রুয়ারি ২৪ ক্যারেট পাকা সোনার বাটের দাম ₹৮৬০০০ এবং হলমার্ক সোনার গহনার দাম ₹৮২১৫০ এ নেমে এসেছে।
স্বর্ণের দাম নির্ধারণের কারণ
স্বর্ণের দাম নির্ধারণে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- আন্তর্জাতিক বাজার: স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তার প্রভাব কলকাতার বাজারেও পড়ে।
- ডলারের মূল্য: স্বর্ণের দাম ডলারের বিপরীতে নির্ধারিত হয়। ডলারের মূল্য বাড়লে স্বর্ণের দাম কমে এবং ডলারের মূল্য কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে।
- চাহিদা ও সরবরাহ: উৎসবের সময় স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়। তখন দামও বাড়ে। আবার চাহিদা কমলে দামও কমে।
- রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা স্বর্ণের দাম বাড়ায়। কারণ মানুষ তখন স্বর্ণে বিনিয়োগ করে নিরাপদ মনে করে।
স্বর্ণ কিনতে পরামর্শ
স্বর্ণ কিনতে গেলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
- হলমার্ক যুক্ত স্বর্ণ কিনুন: হলমার্ক যুক্ত স্বর্ণে খাঁটি সোনার পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়। এটি নকল বা ভেজাল স্বর্ণ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
- বাজারের দাম পর্যবেক্ষণ করুন: স্বর্ণের দাম প্রতিদিন ওঠানামা করে। তাই দাম কম থাকলে কিনতে পারেন।
- বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ: যদি বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনতে চান, তাহলে বার বা কয়েন কিনতে পারেন। এগুলো গহনার চেয়ে সহজে বিক্রি করা যায়।
সোনার সূক্ষ্মতা কী এবং কেন?
সোনার সূক্ষ্মতা বলতে বোঝায় সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশি জনপ্রিয়। সোনার সূক্ষ্মতা সাধারণত প্রতি হাজারে অংশে প্রকাশ করা হয়। যেমন, ২৪ ক্যারেট (24k) সোনাকে ১০০০-এর মধ্যে ১০০০ অংশ হিসাবে ধরা হয়। অর্থাৎ, ২৪ ক্যারেট সোনা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে, ১০০% বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ, সোনায় সামান্য পরিমাণে অন্যান্য ধাতু বা অশুদ্ধতা মিশে থাকে। তাই, খাঁটি সোনার সূক্ষ্মতা ৭৭৭.৭ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই সংখ্যাটিকে ১০ দিয়ে ভাগ করলে ৭৭.৭% পাওয়া যায়, যা সোনার টুকরোতে খাঁটি সোনার পরিমাণ নির্দেশ করে।
১৪ ক্যারেট সোনার সূক্ষ্মতা
১৪ ক্যারেট (14k) সোনার ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতা হিসাব করা হয় একই নিয়মে। ১৪ ক্যারেট সোনার সূক্ষ্মতা হিসাব করতে হলে, ১৪ কে ২৪ দিয়ে ভাগ করে ১০০০ দিয়ে গুণ করতে হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, ১৪ ক্যারেট সোনার সূক্ষ্মতা হওয়া উচিত ৫৮৩.৩৩৩। কিন্তু ইউরোপীয় রীতি অনুযায়ী, বেশিরভাগ নির্মাতারা ৫৮৩-এর বদলে ৫৮৫ ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, ১৪ ক্যারেট সোনার সূক্ষ্মতা ৫৮৫ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি মূলত সোনার গুণমান নিশ্চিত করার জন্য করা হয়।
দেশভেদে সোনার বিশুদ্ধতার মান
সোনার বিশুদ্ধতার মান বা সহনশীলতা দেশভেদে আলাদা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোনার বিশুদ্ধতার অনুমোদিত নেতিবাচক সহনশীলতা ০.৩%। অর্থাৎ, সোনার বিশুদ্ধতা ০.৩% কম হতে পারে, কিন্তু তার বেশি নয়। অন্যদিকে, চীনে এই সহনশীলতা ১% পর্যন্ত অনুমোদিত। অর্থাৎ, চীনে সোনার বিশুদ্ধতা ১% কম হলেও তা আইনত গ্রহণযোগ্য। এই পার্থক্যগুলো মূলত দেশের আইন এবং মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে।
সোনার সূক্ষ্মতা জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সোনার মূল্য এবং গুণমান নির্ধারণ করে। সোনার সূক্ষ্মতা যত বেশি হবে, সোনা তত বেশি মূল্যবান এবং টেকসই হবে। আবার, সূক্ষ্মতা কম হলে সোনা নরম হতে পারে এবং সহজে ক্ষয়ে যেতে পারে। তাই, সোনা কেনার সময় এর সূক্ষ্মতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
সোনার সূক্ষ্মতা হল সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এটি প্রতি হাজারে অংশে প্রকাশ করা হয় এবং বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার জন্য এর মান আলাদা হয়। দেশভেদে সোনার বিশুদ্ধতার মানদণ্ডও পরিবর্তিত হতে পারে। সোনার সূক্ষ্মতা জানা শুধু এর মূল্য নির্ধারণেই সাহায্য করে না, বরং এর গুণমান এবং টেকসইতাও নিশ্চিত করে। তাই, সোনা কেনার আগে এর সূক্ষ্মতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
আমার শেষ কথা
স্বর্ণ শুধু একটি ধাতু নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ। কলকাতায় স্বর্ণের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে স্বর্ণের দামে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেছে। তবে স্বর্ণের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার, ডলারের মূল্য এবং চাহিদা-সরবরাহের ওপর।
আমরা আশা করি, আমাদের এই প্রতিবেদন থেকে আপনি কলকাতায় স্বর্ণের বর্তমান দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। স্বর্ণ কিনতে গেলে হলমার্ক যুক্ত স্বর্ণ কিনুন এবং বাজারের দাম পর্যবেক্ষণ করুন।