সম্প্রতি একটি খবরে চোখ আটকে গেল। কেন্দ্র সরকার সাংসদদের (MP) বেতন ও ভাতা ২৪% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, দেশের সাধারণ মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন শুধু সাংসদদের জন্যই কেন এত বড় সিদ্ধান্ত? সাধারণ কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কথা কবে ভাববে সরকার? এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে একটু খোলাখুলি আলোচনা করব। চলুন, বিস্তারিত জানা যাক।
সাংসদদের ২৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাংসদদের মাসিক বেতন আগে ছিল ১ লক্ষ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাদের দৈনিক ভাতাও বেড়েছে। আগে প্রতিদিন ২০০০ টাকা ভাতা পেতেন, এখন পাবেন ২৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন সাংসদদের পেনশনও বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে তারা ২৫ হাজার টাকা পেনশন পেতেন, এখন পাবেন ৩১ হাজার টাকা। যারা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সাংসদ ছিলেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত পেনশন ২০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকা হয়েছে।
এই বেতন বৃদ্ধি ২০২৩ সালের ১লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে দুই বছর সময় লেগেছে। তাই সাংসদরা গত ২৪ মাসের বকেয়া টাকাও পেয়ে যাবেন। হিসেব করে দেখা গেছে, প্রত্যেক সাংসদ বকেয়া হিসেবে অতিরিক্ত ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা পাবেন। এই টাকা তাদের “Arrears” হিসেবে দেওয়া হবে।
বিষয় | আগের পরিমাণ (টাকা) | নতুন পরিমাণ (টাকা) |
---|---|---|
মাসিক বেতন | ১,০০,০০০ | ১,২৪,০০০ |
দৈনিক ভাতা | ২,০০০ | ২,৫০০ |
পেনশন (প্রাক্তন MP) | ২৫,০০০ | ৩১,০০০ |
অতিরিক্ত পেনশন (৫+ বছর) | ২,০০০ | ২,৫০০ |
বকেয়া টাকা (মোট) | – | ৫,৭৬,০০০ |
সরকার যে যুক্তি দিল
সরকার বলছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাংসদদের বেতন বাড়ানো জরুরি। তাদের মতে, সাংসদরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাদের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে, তাই বেতন বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। এই যুক্তি শুনে মনে হয়, সাংসদদের জন্য সরকারের চিন্তা অনেক। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা কি ভাবা হচ্ছে না?
দেশে যখন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, তখন শুধু সাংসদদের বেতন বাড়লে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। সাধারণ কর্মচারীদের বেতন কবে বাড়বে? যারা সরকারি-বেসরকারি চাকরি করেন, তাদের জন্যও তো দ্রব্যমূল্য বাড়ার চাপ একই রকম। তাহলে শুধু সাংসদদের জন্য এত বড় সিদ্ধান্ত কেন?
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে হয়, সরকারের এই সিদ্ধান্তে একটা ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। যখন দেশের অর্থনীতি চাপে আছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তখন সবার জন্য একটা সমান নীতি থাকা উচিত। সাংসদরা যদি ২৪% বেতন বৃদ্ধি পান, তাহলে সাধারণ কর্মচারীদের জন্যও কিছু ভাবা দরকার।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সাংসদদের দায়িত্ব অনেক, তাই তাদের বেতন বাড়ানো ঠিক আছে। তারা দেশের আইন তৈরি করেন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাই তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা জরুরি। আবার অনেকে বলছেন, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। যখন দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, তখন সাংসদদের জন্য এত টাকা খরচ করা ঠিক নয়।
কিছু বিরোধী দলের নেতারা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, সরকারের উচিত ছিল আগে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা। যেমন, দ্রব্যমূল্য কমানোর চেষ্টা করা বা সাধারণ কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো। কিন্তু সরকার যেন শুধু নিজেদের লোকদের কথাই ভাবছে।
সাংসদদের দায়িত্ব ও বেতন
একটা কথা ঠিক যে, সাংসদদের দায়িত্ব অনেক। তারা দেশের আইন তৈরি করেন, জনগণের সমস্যা সংসদে তুলে ধরেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা কি সত্যিই জনগণের জন্য কাজ করছেন? অনেক সময় দেখা যায়, সংসদে হট্টগোল, তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্ট হয়। জনগণের সমস্যা সমাধানের চেয়ে রাজনীতি বেশি চলে। তাহলে এত বেতন বাড়ানো কি যুক্তিসংগত?
আবার এটাও ঠিক যে, সাংসদদের অনেক খরচ আছে। তারা নিজের এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে দেখা করেন, ভ্রমণ করেন, নানা কাজে টাকা লাগে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরও তো খরচ বাড়ছে। তারা তো সরকারের কাছ থেকে এমন সুবিধা পাচ্ছে না।
আসুন একটু তুলনা করে দেখি। একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারী, যিনি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা বেতন পান, তার বেতন বাড়তে কত সময় লাগে? সাধারণত “Pay Commission” এর মাধ্যমে বেতন বাড়ে, যা ৫-১০ বছর পর পর হয়। কিন্তু সাংসদদের জন্য এই বেতন বৃদ্ধি হঠাৎই হয়ে গেল। এই পার্থক্যটা মেনে নেওয়া কঠিন।
আমার মতামত
আমার মনে হয়, সাংসদদের বেতন বাড়ানোর আগে সরকারের উচিত ছিল সাধারণ মানুষের কথা ভাবা। দ্রব্যমূল্য কমানো, চাকরির সুযোগ বাড়ানো, সাধারণ কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি—এগুলো আগে করা দরকার। সাংসদরা যদি জনগণের প্রতিনিধি হন, তাহলে জনগণের কষ্ট দূর করাই তাদের প্রথম কাজ। নিজেদের বেতন বাড়ানোর আগে এই দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল।
সাংসদদের ২৪% বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতেই থাকবে। কেউ বলবেন এটা ঠিক, কেউ বলবেন ভুল। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষের জন্য কী হচ্ছে? দেশের অর্থনীতি যখন চাপে, তখন সবার জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ নীতি দরকার। সাংসদদের বেতন বাড়ুক, কিন্তু সাধারণ কর্মচারী আর জনগণের কথাও ভাবা উচিত। আপনার কী মনে হয়? এই সিদ্ধান্ত কি সত্যিই যুক্তিসংগত, নাকি এটা শুধু ক্ষমতার লোকদের জন্য একটা সুবিধা? মতামত জানাতে ভুলবেন না! এই ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের আজকাল বাংলাকে ফলো করুন।